সোমবার ২০ অক্টোবর ২০২৫ - ০৯:৫৪
সৎসঙ্গে স্বর্গবাস ও অসৎসঙ্গে সর্বনাশ: কুরআনের আলোকে প্রকৃত চিত্র

মানুষ সামাজিক প্রাণী। তার বিশ্বাস, নৈতিকতা ও জীবনের দিকনির্দেশ নির্ভর করে সে কাদের সান্নিধ্যে রয়েছে, কার পরামর্শে চলছে, আর কার কথায় প্রভাবিত হচ্ছে তার ওপর।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: পবিত্র কুরআন আমাদের সামনে এমন এক গভীর ও চিন্তা-উদ্রেককারী দৃশ্য তুলে ধরেছে, যেখানে জান্নাতবাসীরা নিজেদের অতীত জীবনের কথা স্মরণ করছে এবং একসময়ের বিপথগামী বন্ধুর পরিণতি নিয়ে আলোচনা করছে।

এই দৃশ্যটি বর্ণিত হয়েছে সূরা আস-সাফফাত (আয়াত ৫০–৬০)-এ—

فَأَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ يَتَسَاءَلُونَ
قَالَ قَائِلٌ مِّنْهُمْ إِنِّي كَانَ لِي قَرِينٌ
يَقُولُ أَئِنَّكَ لَمِنَ الْمُصَدِّقِينَ
أَئِذَا مِتْنَا وَكُنَّا تُرَابًا وَعِظَامًا أَئِنَّا لَمَدِينُونَ
قَالَ هَلْ أَنتُم مُّطَّلِعُونَ
فَاطَّلَعَ فَرَآهُ فِي سَوَاءِ الْجَحِيمِ
قَالَ تَاللَّهِ إِن كِدتَّ لَتُرْدِينِ
وَلَوْلَا نِعْمَةُ رَبِّي لَكُنتُ مِنَ الْمُحْضَرِينَ
أَفَمَا نَحْنُ بِمَيِّتِينَ
إِلَّا مَوْتَتَنَا الْأُولَىٰ وَمَا نَحْنُ بِمُعَذَّبِينَ
إِنَّ هَٰذَا لَهُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ

বাংলা অনুবাদ ও ভাবার্থ:
তখন জান্নাতবাসীরা পরস্পরের দিকে ফিরে একে অপরকে প্রশ্ন করতে শুরু করবে। তাদের একজন বলবে, “আমি দুনিয়ায় এক সঙ্গী (বন্ধু) পেয়েছিলাম, সে বলত — ‘তুমি কি সত্যিই বিশ্বাস কর যে আমরা যখন মরব, ধূলা ও হাড়ে পরিণত হব, তখনও কি পুনরুত্থিত করা হবে?’”

সে বলবে, “তোমরা কি দেখতে চাও (আমার সেই বন্ধুর পরিণতি)?”

অতঃপর সে তাকিয়ে দেখবে — তার সেই সঙ্গী জাহান্নামের মাঝখানে অবস্থান করছে।

সে বলবে, “আল্লাহর কসম! তুমি প্রায়ই আমাকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যেতে বসেছিলে! যদি আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ না থাকত, তবে আমিও আজ তোমার মতোই (জাহান্নামে) উপস্থিত হতাম।”

এরপর সে আনন্দভরে বলবে, “আমরা আর মরব না — শুধু সেই একবারই মরেছিলাম (দুনিয়ায়), এবং আমাদের আর কখনও শাস্তি দেওয়া হবে না। নিশ্চয়ই, এ-ই তো প্রকৃত মহাসাফল্য!”

আয়াতের ব্যাখ্যা ও শিক্ষণীয় দিক
এই আয়াতগুলো জান্নাতের এক অভ্যন্তরীণ দৃশ্যকে ফুটিয়ে তুলেছে— যেখানে জান্নাতবাসীরা দুনিয়ার অতীত স্মৃতি ও সম্পর্ক নিয়ে কথা বলছে। তাদের একজন স্মরণ করছে এমন এক বন্ধুকে, যে একসময় তাকে ঈমান, পুনরুত্থান ও আখিরাত সম্পর্কে সন্দেহে ফেলতে চেয়েছিল।

কিন্তু আল্লাহর অনুগ্রহে সে গোমরাহির পথে না গিয়ে ঈমানের ওপর দৃঢ় ছিল। আজ জান্নাতে অবস্থান করে সে দেখছে — তার সেই বন্ধুর করুণ পরিণতি জাহান্নামের গভীরে। তখন কৃতজ্ঞচিত্তে সে বলে ওঠে: “যদি আমার প্রভুর অনুগ্রহ না থাকত, তবে আমিও আজ তোমার মতোই হতাম!”

এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন— ভালো সঙ্গ ও খারাপ সঙ্গের প্রভাব কত গভীর। একজন মানুষ তার সঙ্গের মাধ্যমেই পথ পায় অথবা পথ হারায়।

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “মানুষ তার বন্ধুর ধর্মের ওপর থাকে। সুতরাং তোমাদের প্রত্যেকে খেয়াল করুক, সে কাকে বন্ধু বানাচ্ছে।”

মূল শিক্ষা ও দাওয়াত
ঈমানের পথে স্থির থাকতে চাইলে ভালো ও নেক সঙ্গ প্রয়োজন। যারা দুনিয়াবি যুক্তি ও অবিশ্বাসে প্ররোচিত করে, তাদের সঙ্গ বিপজ্জনক।

আল্লাহর অনুগ্রহই মানুষকে গোমরাহি থেকে রক্ষা করে।
জান্নাতে সত্যিকারের বিজয়ী তারাই, যারা এই দুনিয়ায় ঈমান ও সৎ সঙ্গ রক্ষা করেছে।

কুরআনের এই অংশ শুধু একটি কাহিনি নয়; এটি এক গভীর দাওয়াত— আমাদের সঙ্গ, বন্ধুত্ব ও জীবনচক্র নতুনভাবে ভাবার আহ্বান। দুনিয়ায় যাদের সঙ্গ আমরা বেছে নিই, তারাই হয় আমাদের জান্নাতের সহচর, নয়তো জাহান্নামের সঙ্গী।

তাই আসুন, আমরা সেইসব সঙ্গী বেছে নিই, যারা আমাদের আল্লাহর দিকে আহ্বান জানায়, যাদের সঙ্গে সময় কাটালে হৃদয়ে ঈমান জেগে ওঠে, আর যাদের বন্ধুত্ব আমাদের আখিরাতের মুক্তির সোপান হয়ে ওঠে।

إِنَّ هَذَا لَهُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ — “নিশ্চয়ই, এ-ই তো মহাসাফল্য।”
(সূরা আস-সাফফাত, আয়াত ৬০)

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha